হার্টের ব্লক দূর করার সহজলভ্য ৯টি খাবার

বিটের উপকারিতা ও অপকারিতা - বিটরুট পাউডার খাওয়ার নিয়ম। বিস্তারিত জানুনহার্টের ব্লক দূর করার খাবার সম্পর্কে আজকে এই আর্টিকেলে আলোচনা করতে যাচ্ছি। আপনার যদি এ সম্পর্কে কোন কিছু জানা না থাকে তাহলে এই আর্টিকেলটি পড়ে জেনে নিন হার্ট ব্লক হওয়ার লক্ষণ সমূহ কি কি।
হার্টের ব্লক দূর করার খাবার
সাথে আরও আলোচনা করতে যাচ্ছি মেয়েদের হার্টের সমস্যার লক্ষণ, হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার তালিকা সহ এই ধরনের হার্টের সমস্যা জনিত আরো অনেক বিষয় সুতরাং আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন এবং জেনে নিন হার্টের ব্লক দূর করার খাবার।

সূচিপত্র: হার্টের ব্লক দূর করার খাবার

হার্ট ব্লক কী

হৃদযন্ত্র আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি আমাদের দেহে রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে শরীরের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন ও পুষ্টি পৌঁছাতে সাহায্য করে। হৃদযন্ত্রের সঠিক কার্যক্রমের জন্য মস্তিষ্ক থেকে নির্দিষ্ট বৈদ্যুতিক সংকেত এর প্রয়োজন হয়। এই সংকেতগুলো হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে এবং হৃদযন্ত্রের পেশীগুলোকে সংকুচিত ও প্রশস্ত করে, 

যার ফলে আমাদের শরীরে রক্ত প্রবাহিত হয়ে থাকে। কিন্তু যখনই এই বৈদ্যুতিক সংকেতগুলোর আদান-প্রদানের মধ্যে কোনো ব্যাঘাত ঘটে, তখনই আমাদের শরীরে হার্ট ব্লকের সমস্যা দেখা দেয়। হার্ট ব্লক বা হৃদযন্ত্রের ব্লকেজ বিভিন্ন ডিগ্রি, ধাপে বা মাত্রায় হতে পারে এবং প্রতিটি ধাপে এর লক্ষণগুলোও ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। হার্ট ব্লক (Heart Block) মূলত হার্টের একটি কার্ডিয়াক অবস্থার নাম। 


যেখানে ব্রেন থেকে পাঠানো বৈদ্যুতিক সংকেত হৃদযন্ত্রে পৌঁছানোর পূর্বেই ধীর হয়ে যায় বা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের শরীরে এই অবস্থা তখনই ঘটে যখন আমাদের হৃদযন্ত্রের ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেম সঠিকভাবে কাজ করে না । সাধারণত, ব্রেন থেকে পাঠানো বৈদ্যুতিক সংকেত হৃদযন্ত্রের উপরের অংশ থেকে নিচের অংশে ছড়িয়ে পড়ে, 

যার ফলে হৃদযন্ত্রের পেশীগুলো সংকুচিত প্রসারিত হয়, ফলে আমাদের শরীরে রক্ত পাম্প হয়। তবে হার্ট ব্লকের ক্ষেত্রে ব্রেন থেকে পাঠানো সংকেত গুলি খুব ধীরগতিতে চলতে থাকে অথবা হৃদযন্ত্রে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়।

হার্ট ব্লকের ধাপ সমূহ কী

হার্ট ব্লক অত্যন্ত কষ্টসাধ্য এবং ব্যয়বহুল একটি রোগ। এই রোগটি সাধারণত তিনটি ধাপে হয়ে থাকে। যদি কেউ প্রথম ধাপেই এর লক্ষণগুলো বুঝে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করেন তাহলে তার জন্য অনেক সহজেই এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয়। কিন্তু কেউ যদি এই রোগের তৃতীয় ধাপে পৌঁছে যান তাহলে তার জন্য এই রোগটি থেকে মুক্তি পাওয়ার আর কোনো পথ থাকে না বললেই চলে। সুতরাং আমাদের সকলেরই এই রোগ সম্পর্কে সাম্যক জ্ঞান থাকা অত্যন্ত জরুরি। তাহলে চলুন হার্ট ব্লকের তিনটি ধাপ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা যাক। হার্ট ব্লকের ধাপ তিনটি হচ্ছে:
  • প্রথম ধাপের হার্ট ব্লক
  • দ্বিতীয় ধাপের হার্ট ব্লক
  • তৃতীয় ধাপের হার্ট ব্লক
প্রথম ধাপের হার্ট ব্লক : এই ধরণের হার্ট ব্লকেজ আমাদের জন্য সাধারণত কম বিপজ্জনক এবং স্বাভাবিক হার্টবিটের চেয়ে একটু ধীরগতির হয়ে থাকে।

দ্বিতীয় ধাপের হার্ট ব্লক : এই ধরণের হার্ট ব্লকেযে ব্রেন থেকে পাঠানো বৈদ্যুতিক সংকেত আমাদের হার্টে পৌঁছাতে আংশিকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়, যার ফলে সংকেত গুলি হৃদযন্ত্রের নিচের চেম্বারগুলোতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়।

তৃতীয় ধাপের হার্ট ব্লক: এই ধরণের হার্ট ব্লকেজ আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এ অবস্থায় ব্রেন থেকে পাঠানো বৈদ্যুতিক সংকেত হৃদযন্ত্রে পৌঁছাতে সম্পূর্ণভাবে ব্যাহত হয়, যার ফলে হৃদযন্ত্রের উপরের এবং নিচের অংশের মধ্যে কোনো সমন্বয়ক থাকে না।

হার্ট ব্লক হওয়ার লক্ষণ

হার্ট ব্লক হওয়ার লক্ষণগুলো হার্ট ব্লকের ধরন ও তার গুরুতরতার ওপর নির্ভর করে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। হার্ট ব্লকের লক্ষণগুলো প্রথম অবস্থায় কিছুটা কম হতে পারে, কিন্তু সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ না করলে সময়ের সাথে সাথে তা বেড়ে যেতে পারে। এখানে হার্ট ব্লকের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। হার্ট ব্লকের লক্ষণ গুলো হলো:
  • প্রথম ধাপের হার্ট ব্লকের লক্ষণ
  • দ্বিতীয় ধাপের হার্ট ব্লকের লক্ষণ
  • তৃতীয় ধাপের হার্ট ব্লকের লক্ষণ
প্রথম ধাপের হার্ট ব্লকের লক্ষণ: প্রথম ধাপে আমাদের শরীরে হার্ট ব্লকের লক্ষণগুলো খুবই হালকা হয় এবং অনেক সময় আমাদের শরিরে কোনো লক্ষণ প্রকাশও পায় না। আমাদের দেশের প্রায় বেশিরভাগ মানুষই এই ধরনের হার্ট ব্লক সম্পর্কে সচেতন থাকে না। কারণ তারা হার্ট ব্লকের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে না জানার কারণে তারা যে হার্ট ব্লকের প্রথম ধাপের রোগী তা তারা নিজেই বুঝে উঠতে পারে না। এই ধাপের লক্ষণ গুলি প্রায় সময় দেখাই যায় না তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো খুব কম মাত্রায় দেখা যেতে পারে:
  • হালকা মাথা ঘোরা।
  • হালকা দুর্বলতা।
  • অনিয়মিত হৃদস্পন্দন।
  • ক্লান্তি অনুভব করা ইত্যাদি।
দ্বিতীয় ধাপের হার্ট ব্লকের লক্ষণ: দ্বিতীয় ধাপে আমাদের শরীরে হার্ট ব্লকের লক্ষণগুলো প্রথম ধাপের চেয়ে একটু বেশি গুরুতর হয়ে থাকে এবং এর ফলে হৃদযন্ত্রের কার্যক্রমে অনেক বেশি পরিমাণে সমস্যা দেখা দিতে পারে। দ্বিতীয় ধাপের হার্ট ব্লকের লক্ষণগুলো নিম্নরূপ হতে পারে:
  • হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
  • হৃদস্পন্দন ধীর হওয়া।
  • বুক ধড়ফড় করা।
  • শ্বাস নিতে সমস্যা হওয়া।
  • মাথা ঘোরা বা ভারী লাগা।
  • ক্লান্তি অনুভব করা ইত্যাদি।
তৃতীয় ধাপের হার্ট ব্লকের লক্ষণ: তৃতীয় ধাপের হার্ড ব্লক আমাদের শরীরের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর এবং এই ধাপের হার্ট ব্লকের লক্ষণগুলিও সবচেয়ে বেশি গুরুতর হয়ে থাকে। তৃতীয় ধাপের হার্ট ব্লকের চিকিৎসা তাৎক্ষণিক না করলে রোগীর প্রাণনাশের ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি থাকে। হার্ট ব্লকের তৃতীয় ধাপে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে:
  • অত্যন্ত ধীর হৃদস্পন্দন।
  • তীব্র মাথা ঘোরা বা ভারসাম্য হারানো।
  • বুকের ব্যথা।
  • অত্যধিক ক্লান্তি।
  • বারবার অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
  • শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি।

হার্ট ব্লক হওয়ার কারণ

বিভিন্ন কারণে আমাদের শরীরে হার্ট ব্লক হতে পারে। কিছু কিছু কারণ জন্মগত হতে পারে এবং কিছু কারণ আমাদের শরীরে সময়ের সাথে সাথে দেখা দিতে পারে। এখানে হার্ট ব্লক হওয়ার কিছু সাধারণ কারণ উল্লেখ করা হলো। যেগুলো হলো:
  • হৃদযন্ত্রের টিস্যুর ক্ষতি
  • হার্ট অ্যাটাক
  • জন্মগত হৃদরোগ
  • জন্মগত হৃদরোগ
  • হৃদযন্ত্রের সংক্রমণ
  • ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালেন্স
  • উচ্চ রক্তচাপ
  • উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা
  • ধূমপান
হৃদযন্ত্রের টিস্যুর ক্ষতি: আমাদের অনেকেরই হৃদরোগের কারণে অথবা বয়স বৃদ্ধির কারণে হৃদযন্ত্রের টিস্যুগুলোর ক্ষতি হতে পারে, যা আমাদের মস্তিষ্ক থেকে হৃদযন্ত্রে পাঠানো বৈদ্যুতিক সংকেতের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। যার ফলে আমাদের হার্ট ব্লকের সমস্যা তৈরি হয়।

হার্ট অ্যাটাক: আপনাদের মধ্যে যারা অন্তত জীবনে একবার হার্ট এটাকের সম্মুখীন হয়েছেন তাদের জন্য এটি আরো চিন্তার বিষয়। কারণ হার্ট অ্যাটাকের ফলে আমাদের হৃদ যন্ত্রের পেশী গুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে, যার ফলে হার্ট ব্লকের সমস্যা অনেক বেড়ে যায়।

জন্মগত হৃদরোগ: আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই রয়েছে যারা জন্মগতভাবে হৃদযন্ত্রের গঠনগত সমস্যা নিয়ে জন্মায়, যা পরবর্তীতে তাদের হার্ট ব্লকের কারণ হতে পারে।

হৃদযন্ত্রের সংক্রমণ: আমাদের হৃদযন্ত্রে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে হৃদযন্ত্রের টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা আমাদের মস্তিষ্ক থেকে হৃদযন্ত্রে পাঠানো বৈদ্যুতিক সংকেতের চলাচলকে বাধা দিতে পারে।

ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালেন্স: আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রোলাইট যেমন পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ইত্যাদির ভারসাম্যহীনতার কারণে আমাদের হার্ট ব্লকের সমস্যা হতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপ: হৃদযন্ত্র আমাদের শরীরে রক্ত পাম্প করার কাজ করে থাকে। কিন্তু আমাদের শরীরে যদি উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয় তাহলে রক্ত আমাদের হৃদ যন্ত্রের ধমনীর দেয়ালে প্রচুর চাপ সৃষ্টি করে। এতে করে আমাদের হৃদ যন্ত্রের টিস্যু অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার কারণে আমাদের হার্ট ব্লকের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা: অতিরিক্ত পরিমাণে কোলেস্টেরল যদি আমাদের হৃদ যন্ত্রের ধমনীতে জমা হয় তাহলে এটি আমাদের হৃদ যন্ত্রের বৈদ্যুতিক সংকেতের চলাচল কে বাধা প্রদান করতে পারে, যার ফলে আমাদের হার্ট ব্লকের সৃষ্টি হতে পারে।


ধূমপান: আমাদের দেশে হৃদযন্ত্রের ব্লকের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে ধূমপান করা। দেশের প্রায়ই ৮০ ভাগ হার্ড ব্লকের রোগীই ধূমপান করার কারণেই তাদের এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। তামাকের ধোঁয়া আমাদের রক্তনালীর প্রচুর ক্ষতি করে, যার ফলে আমাদের হার্টে ব্লকের মতো সমস্যা তৈরি হয়।

হার্ট ব্লকের ডাক্তারি চিকিৎসা

হার্ট ব্লকের চিকিৎসা নির্ভর করে এর ধরন এবং গুরুতরতার ওপর। প্রথম ধাপের হার্ট ব্লকের জন্য তেমন কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন পাড়ে না, কিন্তু তৃতীয় ধাপের হার্ট ব্লকের ক্ষেত্রে বিশেষ ধরণের চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। এখানে হার্ট ব্লকের বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসার পদ্ধতি তুলে ধরা হলো। যেগুলো হলো:
  • প্রথম ধাপের হার্ট ব্লকের চিকিৎসা
  • দ্বিতীয় ধাপের হার্ট ব্লকের চিকিৎসা
  • তৃতীয় ধাপের হার্ট ব্লকের চিকিৎসা
প্রথম ধাপের হার্ট ব্লকের চিকিৎসা: আমাদের শরীরের প্রথম ধাপের হার্ট ব্লক সাধারণত কোনো চিকিৎসা ছাড়াই নিয়ন্ত্রণে করা সম্ভব হয়ে থাকে। তবে যদি কোনো ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই ব্লক তৈরি হয়ে থাকে, তাহলে চিকিৎসক এর সাথে পরামর্শ করে ঔষধের ডোজ কমানো যেতে পারে বা অন্য কোনো ঔষধ ব্যবহার করা যেতে পারে।

দ্বিতীয় ধাপের হার্ট ব্লকের চিকিৎসা: দ্বিতীয় ধাপের হার্ট ব্লক হলে রোগীর অবস্থা অনুযায়ী চিকিৎসকেরা চিকিৎসা নির্ধারণ করে থাকেন। এই অবস্থায় যদি লক্ষণগুলি হালকা হয়, তাহলে চিকিৎসক ঔষধ দ্বারাই দ্বিতীয় ধাপের হার্ট ব্লকের চিকিৎসা করে থাকেন। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে লক্ষণগুলি যদি গুরুতর হয়, তাহলে তার অবশ্যই পেসমেকার বসানোর প্রয়োজন হতে পারে।

তৃতীয় ধাপের হার্ট ব্লকের চিকিৎসা: মানুষের জন্য হার্ট ব্লকের সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি হচ্ছে তৃতীয় ধাপের হার্ট ব্লক। কেউ যদি তৃতীয় ধাপের হার্ট ব্লকের শিকার হন তাহলে তাকে অবশ্যই পেসমেকার ব্যবহার করতে হবে। বর্তমানে তৃতীয় ধাপের হার্ট ব্লকের চিকিৎসার জন্য পেসমেকারের তুলনায় নির্ভরযোগ্য আর অন্য কোন মাধ্যম নেই। 

পেসমেকার হচ্ছে একটি ছোট ইলেকট্রনিক ডিভাইস যা হৃদযন্ত্রের বৈদ্যুতিক সংকেতের সমস্যা গুলিকে ঠিক করে দেয়। পেসমেকার আমাদের হার্টের ছন্দ নিয়ন্ত্রণ করে এবং এটি স্বাভাবিকভাবে রক্ত পাম্প করতে হার্টকে সাহায্য করে।

হার্টের ব্লক দূর করার খাবার

হার্টের ব্লক দূর করার খাবার
আমাদের হার্টের ব্লক সাধারণত তখন হয় যখন হার্টের ধমনীতে চর্বি, কোলেস্টেরল, এবং অন্যান্য পদার্থ জমা হয়ে আমাদের শরীরের স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। এটি হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ এবং সময়মতো যদি চিকিৎসা না করা হয় তাহলে এটির থেকে মারাত্মক হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। 

তবে, সময়মতো সঠিক খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করলে হৃদরোগ প্রতিরোধে এবং হার্টের ব্লক দূর করা অনেকাংশেই সহজ হয়ে ওঠে। নিচে কিছু হার্টের ব্লক দূর করার খাবার তালিকা দেওয়া হলো যেগুলো খেলে এটি হার্টের ব্লক দূর করার পাশাপাশি হার্টের সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করবে। হার্টের ব্লক দূর করার খাবার গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু খাবার হল:
  • রসুন
  • ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড
  • শাক-সবজি
  • ফলমূল
  • অলিভ অয়েল
  • বাদাম
  • গ্রিন টি
  • ডার্ক চকলেট
  • অ্যাভোকাডো
রসুন: রসুন আমাদের হৃদযন্ত্রের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি খাবার। রসুনে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যালিসিন উপাদান আমাদের হার্টের ধমনীতে কোলেস্টেরল জমতে দেয় না এবং রক্তনালী পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। এটি আমাদের শরীরের রক্তপ্রবাহ কে উন্নত করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, যা আমাদের হৃদরোগ বা হার্টের ব্লক প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড: ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড আমাদের ধমনীতে জমা চর্বি কমাতে সাহায্য করে এবং ধমনীতে রক্ত সঞ্চালন নিয়ন্ত্রন করে। বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ যেমন স্যামন, সার্ডিন, ম্যাকেরেল, এবং টুনা মাছের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়, যা আমাদের হার্টের ব্লক দূর করতে এবং আমাদের হাটকে সুস্থ রাখতে অত্যন্ত কার্যকর।

শাক-সবজি: সব সময়ই সবুজ শাকসবজি আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। সুস্থ অসুস্থ প্রত্যেকেরই প্রতিদিন সবুজ শাক সবজি খাওয়া উচিত। বিভিন্ন ধরনের সবুজ শাক-সবজি যেমন পালং শাক, ব্রকোলি, কেল শাক এবং অন্যান্য রঙিন শাক সবজিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ফাইবার থাকে, যা আমাদের শরীরের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে খুব সহায়তা করে। শাক সবজিতে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আমাদের ধমনীতে কোন ক্ষতিকর পদার্থ জমা হতে দেয় না। কোন ক্ষতিকর পদার্থ জমা হয়ে থাকলেও সেটি পরিষ্কার করে ফেলে হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

ফলমূল: বিভিন্ন ধরনের ফলমূল বিশেষ করে আপেল, বেরি (স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, রাস্পবেরি), আঙ্গুর এবং কমলালেবুর মতো ফল আমাদের শরীরের হৃদরোগ প্রতিরোধ এবং হার্টের ব্লক দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ফলগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ফাইবার থাকে, যা আমাদের হৃদযন্ত্রের ধমনীর দেয়ালকে মজবুত করে এবং তাতে চর্বি জমতে বাধা দেয়। এইসব ফলের মধ্যে থাকা ফাইটোস্টেরল এবং ফ্ল্যাভোনয়েডস হার্টের ব্লকের ঝুঁকি কমাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

অলিভ অয়েল: অলিভ অয়েল এ প্রচুর পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট পাওয়া যায়। এছাড়াও এতে প্রচুর পরিমাণে মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যা আমাদের শরীরের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং আমাদের হার্টের ধমনীতে ব্লক হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশেই কমিয়ে দেয়। নিয়মিত খাবারে অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষা করা অনেক সহজ হয়ে যায়।

বাদাম: বিভিন্ন ধরনের বাদাম যেমন আখরোট, কাজু, আমন্ডের মতো বাদাম আমাদের হৃদ যন্ত্রের জন্য খুবই উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, প্রোটিন, এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট পাওয়া যায়, যা আমাদের হার্টের ধমনীতে কোলেস্টেরল জমা হতে বাধা দেয়। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এক মুঠো বাদাম হার্টের ব্লকের ঝুঁকি অনেকাংশেই কমিয়ে আনতে পারে।

গ্রিন টি: গ্রিন টি আমাদের হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এতে থাকা ক্যাটেচিন নামক উপাদান ধমনীতে চর্বি জমতে বাধা দেয় এবং রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও গ্রিন টি আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট কমাতে সহায়তা করে যার ফলে আমাদের শরীরের রক্ত চলাচল অনেক আংশেই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। প্রতিদিন অন্তত এক কাপ গ্রিন টি পান করা হার্টের জন্য খুবই উপকারী।

ডার্ক চকলেট: ডার্ক চকলেটে প্রচুর পরিমানে ফ্ল্যাভোনয়েডস থাকে, যা আমাদের ধমনীতে চর্বি জমা অনেক অংশেই কমিয়ে আনে এবং ধমনীতে রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে। তবে এক্ষেত্রে হার্টের রোগীদের জন্য চিনি ও চর্বির পরিমাণ কম থাকে এমন ধরনের ডার্ক চকলেট বেছে নেওয়া উচিত।

অ্যাভোকাডো: অ্যাভোকাডো একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ফল। কিছুদিন পূর্বেও এই ফলটির মূল্য সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও বর্তমানে দেশের মাটিতে ফলটি চাষ হওয়ার কারণে এর ক্রয় মূল্য কিছুটা নাগালের মধ্যে এসেছে। অ্যাভোকাডোতে আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজন এরকম প্রচুর স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং পটাসিয়াম থাকে, যা আমাদের শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। এটি আমাদের হার্টের ব্লক কমাতে খুবই কার্যকরী।


সঠিক খাদ্যাভ্যাস আমাদের শরীরের হৃদরোগ প্রতিরোধে এবং হার্টের ব্লক দূর করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এছাড়াও, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম, খেলাধুলা, পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে হৃদরোগ এবং হার্ট ব্লকের ঝুঁকি অনেকাংশেই কমানো সম্ভব।

হার্টের ব্যথা কোথায় হয়

আমাদের শরীরে হার্ট অ্যাটাকের ব্যথা সাধারণত বুকের মাঝখানে বা বাঁ পাশে অনুভব হয়ে থাকে। আমাদের শরীরে হার্ট অ্যাটাকের ব্যথা সাধারণত বুকের ওপর চাপ, জ্বালাপোড়ার অনুভূতি বা বুকভারীর অনুভূতির মতো হতে পারে। অনেক সময় হার্টের ব্যথা পিঠ, ঘাড়, চোয়াল, বা বাম হাতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই ব্যথা ডান হাতেও অনুভূত হতে পারে। 

হার্টের ব্যথা অনেক সময় দীর্ঘক্ষণ ধরেও স্থায়ী হতে পারে এবং সেই সাথে শ্বাসকষ্ট, ঘাম, মাথা ঘোরা বা বমিভাবের মতো অন্যান্য উপসর্গও দেখা দিতে পারে। হার্টের সাধারণ ব্যথাও হার্ট অ্যাটাক বা অন্যান্য হৃদরোগের লক্ষণ হতে পারে, তাই আপনাদের কারো এই ধরনের ব্যথা অনুভূত হলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

হার্টের সমস্যার লক্ষণ

হৃদরোগ বা হার্টের সমস্যা আমাদের শরীরে বিভিন্ন উপসর্গের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। অনেক সময় আমরা এই লক্ষণগুলোকে সাধারণ শারীরিক সমস্যা হিসেবে উপেক্ষা করে থাকি, যা পরবর্তীতে আমাদেরকে মারাত্মক হৃদরোগের দিকে নিয়ে যেতে পারে। সঠিক সময়ে হার্টের সমস্যার লক্ষণগুলো চিহ্নিত করা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সময়মতো হার্টের সমস্যার চিকিৎসা করা না হলে তা আমাদের মৃত্যুর কারণও হতে পারে। হার্টের সমস্যার উল্লেখযোগ্য লক্ষণ গুলো হলো:
  • বুকে ব্যথা বা চাপ
  • শ্বাসকষ্ট
  • ক্লান্তি ও দুর্বলতা
  • ঘাম হওয়া
  • মাথা ঘোরা বা মূর্ছা যাওয়া
  • অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন
  • পায়ে বা পায়ের গোড়ালিতে ফোলা
  • বমিভাব বা হজমের সমস্যা
বুকে ব্যথা বা চাপ: হৃদরোগ বা হার্টের সমস্যার সবচেয়ে সাধারণ এবং উল্লেখযোগ্য লক্ষণ হলো বুকে উপর ব্যথা বা চাপ অনুভব করা। এই ব্যথা বা চাপ সাধারণত আমাদের বুকের বাম পাশে বা বুকের মাঝখানে বেশি অনুভূত হয় এবং কখনো কখনো এটি অনেক সময় যাবত স্থায়ী হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই ব্যথা আমাদের পিঠ, ঘাড়, চোয়াল বা হাতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই ধরনের ব্যথা হার্ট অ্যাটাকের সবচেয়ে সাধারণ এবং প্রথম লক্ষণ গুলোর একটা।

শ্বাসকষ্ট: শ্বাস নিতে কষ্ট বা শ্বাসকষ্টও হার্টের সমস্যার একটি অন্যতম সাধারণ লক্ষণ। যখন হৃদযন্ত্র আমাদের শরীরে রক্ত পাম্প করতে ব্যর্থ হয়, তখন শরীর তার প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন পায় না, যার ফলে আমাদের শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। শারীরিক পরিশ্রম করার সময় ছাড়াও বিশ্রামের সময় বা ঘুমের সময়ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে, যা সাধারণত হার্ট ফেইলিউর বা হৃদযন্ত্রের সমস্যার কারণে হয়ে থাকে।

ক্লান্তি ও দুর্বলতা: হৃদযন্ত্রের সমস্যা থাকলে আমাদের শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে শক্তি উৎপন্ন করতে পারে না, যার ফলে রোগী অনেকটা অবসাদগ্রস্ত এবং দুর্বল বোধ করেন। এর ফলে স্বাভাবিক দৈনন্দিন কাজকর্ম করার সময়ও আমাদের অতিরিক্ত ক্লান্তি এবং দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে।

ঘাম হওয়া: হার্টের সমস্যা থাকলে অনেক সময় আমাদের হঠাৎ করে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে, বিশেষ করে ঠাণ্ডা ঘাম। এটি হার্ট অ্যাটাকের পূর্বলক্ষণ হতে পারে। এরকম হলে যত দ্রুত সম্ভব আমাদের চিকিৎসা নেওয়া উচিত।

মাথা ঘোরা বা মূর্ছা যাওয়া: হৃদরোগের আরেকটি প্রধানতম লক্ষণ হলো হঠাৎ করে মাথা ঘোরা বা মূর্ছা যাওয়া। এটি আমাদের সাথে তখনই ঘটে যখন আমাদের হৃদযন্ত্র যথেষ্ট পরিমাণে রক্ত পাম্প করতে পারে না এবং মস্তিষ্ক পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হার্ট ব্লক বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন এই সকল লক্ষণের কারণেই হতে পারে।

অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন: অনিয়মিত বা দ্রুত হৃদস্পন্দন হার্টের সমস্যার একটি ইঙ্গিত হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের ভাষায় এই অবস্থাকে এরিথমিয়া বলা হয়, যার কারনে হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক স্পন্দন ব্যাহত হয়। যদি কখনো আপনাদের কোনো ধরনের অস্বাভাবিক বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন অনুভূত হয়, তাহলে তা হৃদরোগের লক্ষণ হতে পারে।

পায়ে বা পায়ের গোড়ালিতে ফোলা: হৃদযন্ত্র যখন রক্ত সঠিকভাবে পাম্প করতে পারে না তখন আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে, বিশেষ করে পায়ের পাতার দিকে বা পায়ের নিচের অংশ ফুলে যেতে পারে। এটি হার্ট ফেইলিউরের প্রধানতম লক্ষণগুলির মধ্যে একটি। এর ফলে শরীরের নিচের অংশে তরল জমা হয় এবং ফোসকা পড়ার মতো হয়ে ফুলে যায়।

বমিভাব বা হজমের সমস্যা: হার্টের সমস্যার কারণে অনেক সময় আমাদের বমি বমি ভাব, অম্বল বা হজমের সমস্যাও তৈরি হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে হার্ট অ্যাটাকের আগে রোগীরা গ্যাস্ট্রিক বা হজমের সমস্যার কথা বলে থাকেন।

হার্টের সমস্যার লক্ষণগুলো অনেক সময় খুব সূক্ষ্ম হতে পারে এবং তা প্রায়ই অন্যান্য শারীরিক সমস্যার সাথে মিশে যেতে পারে। তবে, এসব লক্ষণ দেখা দিলে আমাদের অবিলম্বে একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ নেওয়া উচিত। সময়মতো চিকিৎসা শুরু করলে হয়তোবা হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব হয়ে উঠবে।

মেয়েদের হার্টের সমস্যার লক্ষণ

হার্টের ব্লক দূর করার খাবার আর্টিকেলের এই পর্যায়ে আমরা আলোচনা করতে যাচ্ছি মেয়েদের হার্টের সমস্যার লক্ষণ সম্পর্কে। হার্টের সমস্যা বা হৃদরোগ সাধারণত পুরুষদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায় বলে মনে করা হলেও, নারীদের মধ্যে হার্টের সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তবে, মেয়েদের হার্টের সমস্যার লক্ষণগুলো অনেক সময় পুরুষদের তুলনায় কিছুটা ভিন্ন হতে পারে, এবং এই ভিন্নতার কারণেই অনেক সময় নারীদের হৃদরোগ সঠিকভাবে নির্ণয় করা যায় না বা সময় মতো তাদের চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হয় না। 

মেয়েদের হার্টের সমস্যার লক্ষণগুলো সচেতন ভাবে প্রত্যেকেরই জানা অত্যন্ত জরুরি, কারণ সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না করা হলে এটি রোগীর জন্য প্রাণঘাতীও হতে পারে। বুকে ব্যথা হৃদরোগের অন্যতম প্রধান লক্ষণ হলেও, মেয়েদের ক্ষেত্রে এই ব্যথা বা অস্বস্তি অনেক সময় পুরুষদের তুলনায় কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। মেয়েরা প্রায়শই বুকের মাঝখানে বা বাঁ পাশে চাপ, 

চাপা ব্যথা বা জ্বলুনি অনুভব করে থাকেন। তবে, কিছু কিছু নারীর ক্ষেত্রে এ ব্যথা তীব্র না হয়ে হালকা চাপ বা অস্বস্তি হিসেবেও অনুভূত হতে পারে। হার্টের সমস্যার কারণে অনেক নারীর শরীরে অস্বাভাবিক ক্লান্তি এবং দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। এমনকি তারা যদি বেশি পরিশ্রমও না করেন, তবুও তাদের সারাক্ষণ অবসন্ন এবং দুর্বল বোধ অনুভব হতে পারে। 

এটি কিছু বিশেষত নারীদের ক্ষেত্রে হৃদরোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হতে পারে। অনেক সময় মেয়েদের হৃদরোগের কিছু কিছু লক্ষণ পুরুষদের তুলনায় সামান্য ভিন্ন এবং কম তীব্র হতে পারে, ফলে মেয়েরা প্রায়ই এই লক্ষণগুলো অবহেলা করে রেখে দেই। 

কিন্তু আমাদের সকলেরই এই লক্ষণগুলোকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত এবং সময়মতো এর চিকিৎসা শুরু করা উচিত, কারণ সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পেলে হার্টের সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।

হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার

হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার
হার্টের রোগীরা যদি তাদের প্রতিদিনের স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলেন তাহলে তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব। নিয়মিত শারীরিক ব্যায়ামের পাশাপাশি আমাদের হার্টের জন্য যে সমস্ত খাবার অত্যন্ত উপকারী, আমাদের এই ধরনের খাবার গ্রহণ করতে হবে। আবার খেয়াল রাখতে হবে যে আমাদের হার্টের জন্য যে সমস্ত খাবার ক্ষতিকর


কোনমতেই আমরা যেন সেগুলি গ্রহণ না করি। এই ধরনের খাবারগুলি থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে প্রথমে আমাদেরকে জানতে হবে এগুলি কি কি। তাই এই পর্যায়ে আমরা আলোচনা করতে যাচ্ছি হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার গুলি কি কি। হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:
  • প্রক্রিয়াজাত খাবার
  • চিনি ও মিষ্টি
  • লাল মাংস ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট
  • অতিরিক্ত লবণ
প্রক্রিয়াজাত খাবার: একজন হার্টের রোগীর অবশ্যই প্যাকেটজাত খাবার যেমন ফাস্ট ফুড, চিপস, এবং প্রসেসড মাংস খাওয়া থেকে নিজেকে এড়িয়ে চলা উচিত। এগুলো সব ট্রান্স ফ্যাট জাতীয় ও অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার, যা আমাদের শরীরের রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয় এবং আমাদের হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক বৃদ্ধি করে।

চিনি ও মিষ্টি: অতিরিক্ত চিনি এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার যেমন সফট ড্রিঙ্কস, কেক, পেস্ট্রি, এবং মিষ্টান্ন হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। একজন হার্টের রোগীর জন্য এ ধরনের খাবার কম খাওয়া উচিত এবং পারলে এড়িয়ে চলাই উচিত।

লাল মাংস ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট: গরুর মাংস, ভেড়ার মাংস এবং চর্বিযুক্ত খাবার যেমন মাখন, চিজ হার্টের রোগীদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এ সকল খাবারে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকে, যার ফলে আমাদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।

অতিরিক্ত লবণ: লবণ হৃদরোগের অন্যতম প্রধান শত্রু। অতিরিক্ত লবণ খেলে আমাদের শরীরের রক্তচাপ খুব দ্রুত বেড়ে যায়, যা আমাদের হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়। তাই হার্টের রোগীদের জন্য প্রতিদিনের খাবারে লবণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।

হার্ট ভালো রাখার উপায়

হার্ট যেহেতু আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সেহেতু এটিকে সুস্থ রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এটি সারাক্ষণ রক্ত পাম্প করে আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ করে থাকে। তাই হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখার চেষ্টা করা আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। বর্তমানে আমাদের অনিয়মিত জীবনযাত্রা, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ এবং শরীরচর্চার অভাবে হৃদরোগের ঝুঁকি ক্রমেই বেড়ে চলেছে। 

তবে কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চললেই হার্টের সকল রোগ প্রতিরোধ করা এবং হার্ট ভালো রাখা সম্ভব। হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে আমাদের সঠিক এবং স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সকলেরই প্রতিদিন শাকসবজি, ফলমূল, শস্যজাতীয় খাবার, বাদাম খাওয়া উচিত। খাবারের পাশাপাশি শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম হৃদযন্ত্রকে শক্তিশালী রাখতে সাহায্য করে। 

এছাড়াও সবচেয়ে বেশি হার্টের রোগ হয় যে কারণে সেটি হচ্ছে ধূমপান। তাছাড়া অতিরিক্ত মদ্যপানও আমাদের হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাই ধূমপান এবং মদ্যপান থেকে বিরত থাকা হার্ট ভালো রাখার জন্য অত্যন্ত জরুরি।

লো প্রেসারে কি হার্ট এটাক হয়

লো প্রেসার বা রক্তচাপ কম থাকা অবস্থায় সাধারণত হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক কম থাকে। তবে, যদি আমাদের শরীরে রক্তচাপ অত্যন্ত কমে যায়, তখন হৃদযন্ত্রে পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত পৌঁছাতে পারে না, ফলে শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এতে করে হার্টের কার্যক্ষমতা অনেক কমে যায় এবং যাদের দুর্বল হৃদযন্ত্র রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকাংশেই বেড়ে যায়। 

আপনাদের মধ্যে যাদের লো প্রেসার রয়েছে সাধারণত তাদের মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যা হার্টের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তাই হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচতে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করা এবং সময়মতো চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

হার্ট ভালো আছে বুঝার উপায়

কয়েকটি লক্ষণ পর্যালোচনা করার মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার হার্ট ভালো আছে কিনা। যেগুলো হচ্ছে নিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকা, শারীরিক পরিশ্রমের পরও শ্বাসকষ্ট বা অতিরিক্ত ক্লান্তি না হওয়া, রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল স্বাভাবিক মাত্রায় থাকা ইত্যাদি। পাশাপাশি, হৃদস্পন্দন ঠিকমত হচ্ছে কিনা সেটার দিকে খেয়াল রাখা অত্যন্ত জরুরি। 

এছাড়াও পর্যাপ্ত ঘুম হওয়া, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা হার্টের স্বাস্থ্য ভালো থাকার ইঙ্গিত হতে পারে। তবে সঠিকভাবে হার্ট ভালো আছে কিনা তা বুঝার জন্য নিয়মিত হার্ট পরীক্ষা করা উচিত।

হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষণ

হার্ট অ্যাটাকের প্রধানতম লক্ষণ হলো বুকে তীব্র ব্যথা বা চাপ, যা প্রায়শই বুকের মাঝখানে বা বাঁ পাশে অনুভূত হয়। এছাড়াও শ্বাসকষ্ট, ঘাম হওয়া, মাথা ঘোরা, এবং বমিভাবও হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ হতে পারে। অনেক সময় ক্লান্তি, দুর্বলতা এবং শারীরিক পরিশ্রম ছাড়াও হঠাৎ করে শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়াও ও হার্ট অ্যাটাকে লক্ষণ হতে পারে। আপনাদের কারো যদি এই ধরনের কোন উপসর্গ দেখা দেয় তাহলে তার দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া বা ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা অত্যন্ত জরুরি।

আমাদের শেষ কথা

হার্ট ব্লক একটি গুরুতর হৃদরোগ যা হৃদ যন্ত্রে ব্রেন থেকে পাঠানো বৈদ্যুতিক সংকেতের সমস্যার কারণে ঘটে থাকে। হার্ট ব্লক শনাক্ত করা এবং এর সঠিক চিকিৎসা নেওয়া আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সঠিক সময়ে যদি এটির চিকিৎসা না করা হয় তাহলে এটি আমাদের জন্য মারাত্মক রূপ ধারণ করতে পারে। তাই যদি কখনো কোনদিন হার্ট ব্লকের লক্ষণগুলির কোন লক্ষণ আমাদের মাঝে দেখা দেয়, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব আমাদের একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, জীবনধারার মানের পরিবর্তন, এবং পেশাগত পরামর্শ গ্রহণের মাধ্যমে হার্ট ব্লকের ঝুঁকি কমানো যেতে পারে।

এতক্ষণ ধরে চেষ্টা করলাম আপনাদেরকে হার্টের ব্লক দূর করার খাবার কোনগুলো তা সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা দেওয়ার। আমি চেষ্টা করেছি আপনাদের সামনে অনেক সহজ ভাষায় হার্টের ব্লক দূর করার খাবার গুলি উপস্থাপন করার। আশা করছি উপরের সবকিছু মনোযোগ সহকারে পড়লেই আপনি হার্টের ব্লক দূর করার খাবার কোনগুলো তা সম্পর্কে জানতে পারবেন।

এই আর্টিকেলটি যদি আপনার পছন্দ হয়ে থাকে তাহলে আমাদের ওয়েবসাইট ঘুরে এই ধরনের আরো অনেক আর্টিকেল পড়তে পারেন। আমরা প্রতিনিয়ত এই ধরনের স্বাস্থ্য রিলেটেড আর্টিকেল আমাদের ওয়েবসাইটে পাবলিস্ট করে থাকে। এতক্ষণ ধরে আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ম্যাজিক টেক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url